নর্স পুরাণ মতে র্যাগনারক মানে গড অফ রুলস (র্যাগনা) এর নিয়তি বা মৃত্যু। র্যাগনারক হল পৃথিবীর শেষ এবং পুনঃজন্ম নিয়ে প্রাক ভাইকিংস পোরাণিক কাহিনী। র্যাগনারক এর আরেকটি অর্থ হল ঈশ্বরের অন্ধকার। ধারণা করা হয় র্যাগনারক ৬ শতকের (Common Era) প্রাক ভাইকিংস পোরাণিক কাহিনী। র্যাগনারক এর কাহিনী অনুযায়ী নর্স গড দের মধ্যে যুদ্ধ হবে এবং এর ফলে পৃথিবীর ধ্বংস ও পুনঃজন্ম লাভ করবে।
র্যাগনারক কাহিনী বিভিন্ন মধ্যযুগীয় নর্স সোর্সে পাওয়া যায়। আইসল্যান্ডের ইতিহাসবিদ স্নোরি স্টার্লসন এর লেখা গদ্য Edda এর জিয়ফাগিনিং পান্ডুলিপিতে র্যা গনারক এর কাহিনী পাওয়া যায়। ভাষাতত্ত্ববিদ দের মতে এটা ৬ শতকে লেখা। এই গদ্যের সবথেকে পুরোনো কপিটি পশুর চামড়ায় লেখা হয়েছিল।
র্যাগনারক এর কাহিনী
র্যাগনারক শুরু হবার পূর্ব মুহূর্তে কিছু চিহ্ন দেখা যাবার ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী করে দেওয়া হয়েছে নর্স পুরাণে। একের পর এক এই ঘটনাগুলো ঘটবে।এগুলো দেখেই বুঝতে হবে শেষ সময় এসে গেছে ।
গ্রেট উইন্টার
প্রথম সংকেত হল একটানা তিনটা শীত ঋতু । মিডগার্ড (পৃথিবী) এর মানুষ সকল ন্যায় নীতি ভুলে যাবে । এসময় দ্য গ্রেট উইন্টার নেমে আসবে। যে শীতে মারা যাবে মিডগার্ডের সকল মানুষ। শুধু ভাইকিংসরা মনে করে তারা এই শীত সার্ভাইভ করতে পারবে। এই শীত এর পর ফেনরির নামের নেকড়ে আকৃতির দেবতাকে মুক্ত করতে চেষ্টা করবে তার দুই ছেলে। ফেনরিরকে মুক্ত করতে দরকার ভূমি বিদীর্ণ হওয়া। এজন্য প্রথমে তার এক ছেলে ‘স্কল’ সূর্যটাকে গিলে খাবে, আরেক ছেলে ‘হাতি’ চাঁদ সহ অন্যান্য নক্ষত্রগুলো গিলে নেবে! তখন অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যাবে গোটা বিশ্বজগত। ভয়াবহ ভূমিকম্প শুরু হয়ে যাবে গোটা পৃথিবী জুড়ে। তখনই শিকল ছিড়ে মুক্তি পাবে ফেনরির। ফেনরির সাথে তার পিতা লোকিও মুক্তি পাবে।
মোরগের ডাক
তিনটা মোরগ তিনবার ডেকে সতর্ক করে দিবে সকলকে র্যাগনারক সম্পর্কে। প্রথমে লালরঙ্গা মোরগ ‘জালার’ ডাক দিয়ে সতর্ক করবে জতুনহাইম জগতের জায়ান্টদের। তাতে জায়ান্টরা যুদ্ধসাজ নিবে, এইসারদের বিরুদ্ধে শেষ একটা লড়াই করে পুরো কসমসকে দখল করার জন্য । এর কিছু সময় বাদে গোল্ডেন কম্ব নামক দ্বিতীয় মোরগ ভ্যালহালা নামক এইসার দেবতাদের বিশাল প্রাসাদের দরজায় ডেকে উঠবে। এরপরে সবশেষে আরেকটা মোরগ ডেকে উঠবে মৃতদের জগতে, যেখানে শাসন করছে লোকির কন্যা হেল। সেই ডাকে জেগে উঠবে মৃতরা। মৃতদের হাত-পায়ের নখ দিয়ে তৈরি ‘নালফার’ নামক এক জাহাজে চড়ে বসবে তারা। যুদ্ধের জন্যে ধেয়ে আসবে এইসারীয়দের দিকে। মৃতদের কমান্ডে থাকবে স্বয়ং লোকি। এ সময় রাইম নামক আইস জায়ান্ট পূর্ব থেকে আসবে তার বাহিনী নিয়ে এবং লোকির সাথে যোগ দিবে।
যুদ্ধ প্রস্তুতি
অ্যাসগার্ডের নিরাপত্তায় নিয়োজিত প্রধান দেবতা হাইমডাল যার নয়টা জগতের সব দিকে চোখ রয়েছে যার কোনো ঘটনাই নজর এড়ায় না। তিনি দেখে ফেলবেন অ্যাসগার্ডের দিকে ধেয়ে আসা জায়ান্ট এবং মৃতদের বাহিনীটাকে। তখন ‘জালারহর্ন’ নামক শিঙ্গায় ফুঁক দিয়ে বসবেন তিনি। এইসারীয় দেবতারা এসে জমায়েত হবেন বিশাল হলে। সেখানে ওডিনের নেতৃত্বে তারা নিবেন যুদ্ধসাজ। সমস্ত বাহিনী মিলে জমায়েত হবে ‘ভিগ্রিয়দ’ নামক এক ময়দানে। সেখানেই হবে চূড়ান্ত লড়াই।
যুদ্ধ
গ্রেট উইন্টার এর তৃতীয় বছর দেবতাদের মধ্যকার এই মহাযুদ্ধ শুরু হয়। দেবতাদের রাজা ওডিন লড়াই করে ফেনরির এর বিরুদ্ধে। এ লড়াই এ ফেনরির ওডিনকে গিলে খায়। ফেনরির কে মেরে বাবার মৃত্যুর প্রতিশোধ নেয় ওডিনপুত্র ভিদার। হাইমডাল লড়াই করে লোকির বিরুদ্ধে এবং নর্সের আবহাওয়ার দেবতা ফ্রেয়ার লড়াই করে জায়ান্ট সার্টার এর বিরুদ্ধে। একহাতি যুদ্ধদেবতা টিয়ার মুখোমুখি হয় হেলহাউন্ড গার্ম এর বিরুদ্ধে। এইসারদের গ্রেট ব্রিজ ভেঙে যাবে এবং স্বর্গে আগুন লেগে যাবে।
যুদ্ধের শেষ ঘটনা হবে দেবতা থর ও মিডগার্ডের বিশালাকার সাপ এর মধ্যে লড়াই। থরের হাতুড়ির আঘাতে সাপের মাথা থেতলে যাবে কিন্তু মরার আগে সে তার বিঁষদাত বসিয়ে দেবে থরের শরীরে। নয় পা পিছিয়ে আসতেই থরের মৃত্যু হবে।
মারা যাওয়ার আগে জায়ান্ট সার্টার আগুন নিক্ষেপ করবে সে আগুনে পৃথিবী পুড়ে যাবে ।
পুনঃজন্ম
দুজন মানব-মানবী ও ছয়জন দেবতা শেষ দিনের সেই ভয়াবহতার পরেও বেঁচে থাকবে। দেবতারা সবাই থর ও ওডিনের সন্তান। দুজন মানুষ বেঁচে থাকবে, কারণ পুরো সময়টাই তারা লুকিয়েছিলো।
লিফ নামের সেই পুরুষ ও লিফথ্রাসির নামের সেই নারী ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের সময় জাদুর এক বনে লুকিয়ে থাকাতেই বেঁচে যাবে। সকাল বেলার কুয়াশা পান করেই বেঁচে থাকতে হয় তাদের। সূর্যের একটি মেয়ে থাকবে যে কিনা এসে সূর্যের দায়িত্ব নেবে। আবারো দুজন মানব-মানবী থেকে শুরু হবে মানবজাতির নতুন ইতিহাস।
সৌজন্যে: মোরশেদ রিফাত ( টম )
Horror
Follow Us