গত কিছু বছরে বাংলাদেশে প্রচুর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গড়ে উঠেছে। এই সংগঠনগুলো বিভিন্ন সামাজিক ইস্যু নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেই ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করার সুযোগ থাকে।

ভলান্টিয়ারিং করা যদিও একদমই নিজস্ব পছন্দ, তবুও ছাত্রজীবনে ভলান্টিয়ারিং-এর একটা আলাদা গুরুত্ব আছে। চলো দেখা যাক, ছাত্রজীবনে ভলান্টিয়ারিং কেন জরুরি……

১. ‍উপযুক্ত সময়

ছাত্রজীবনই ভলান্টিয়ারিং করার উপযুক্ত সময়। লেখাপড়া শেষ করে যখন আমরা ক্যারিয়ার গড়তে ব্যস্ত হয়ে পড়ি তখন ইচ্ছে করলেও অনেক কিছুতে সময় দেয়া যায় না। ছাত্রজীবনে দায়িত্ব কিছুটা কম থাকে,অর্থনৈতিক চিন্তাও কম থাকে, নানা ধরণের এক্সপেরিমেন্ট করার সুযোগ থাকে। তাই পরবর্তী জীবনে আফসোস করতে না চাইলে ছাত্রজীবনেই ভলান্টিয়ারিছাত্রজীবনই ভলান্টিয়ারিং করার উপযুক্ত সময়। লেখাপড়া শেষ করে যখন আমরা ক্যারিয়ার গড়তে ব্যস্ত হয়ে পড়ি তখন ইচ্ছে করলেও অনেক কিছুতে সময় দেয়া যায় না। ছাত্রজীবনে দায়িত্ব কিছুটা কম থাকে,অর্থনৈতিক চিন্তাও কম থাকে, নানা ধরণের এক্সপেরিমেন্ট করার সুযোগ থাকে। তাই পরবর্তী জীবনে আফসোস করতে না চাইলে ছাত্রজীবনেই ভলান্টিয়ারিং করা উচিত।

২. সিভিতে অভিজ্ঞতা হিসেবে যোগ হবে

আমরা অনেকেই চাকরিতে আবেদন করতে গিয়ে একটা কমন সমস্যায় পড়ি। সাধারণত বেশিরভাগ চাকরিতেই জব এক্সপেরিয়েন্স চাওয়া হয়। একদম ফ্রেশারদের জন্য চাকরির সুযোগ খুবই কম থাকে। এক্সপেরিয়েন্স না থাকার জন্য আমরা অনেক জায়গায় আবেদন পর্যন্ত করতে পারি না।

এদিকে লেখাপড়া করতে করতে চাকরি করাও তো সম্ভব না! তাহলে উপায় কী?

এই সমস্যার সবচেয়ে ভালো সমাধান হলো, তুমি যে সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে চাচ্ছো সেধরণেরই কোন একটা প্রতিষ্ঠানে ভলান্টিয়ারিং করা। যে ধরণের কাজ তোমাকে ভবিষ্যতে চাকরিক্ষেত্রে গিয়ে করতে হবে, তার কাছাকাছি কোন কাজ ছাত্রজীবনেই ভলান্টিয়ার হিসেবে করতে পারলে, সেটা পরবর্তীতে কাজে লাগবে।

তবে অন্য ক্যারিয়ার রিলেটেড ভলান্টিয়ারিং না করলেও সমস্যা নেই। যে কোন ধরণের ভলান্টিয়ারিং-ই সিভিতে এক্সপেরিয়েন্স, এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি হিসেবে যোগ হবে। সামাজিক সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানে ভলান্টিয়ারিং এর অভিজ্ঞতা থাকলে তা যে কোন চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানেই গুরুত্বের সাথে নেওয়া হয়।

৩. নেটওয়ার্ক তৈরি করবে

লেখাপড়া শেষ করে চাকরিতে ঢোকার পরে কাজের চাপে চাইলেই অনেক কিছু করা যায় না। ভলান্টিয়ারিং করার সময় কাজের চাপ অত বেশি থাকে না, পরিবেশও থাকে বন্ধুসুলভ। অন্যদিকে কর্মক্ষেত্রে বস ও অন্যান্য কলিগদের এক্সপেক্টেশন মেটানোর একটা বিষয় থাকে। এই চাপটা ভলান্টিয়ারদের উপরে কম থাকে।

তাই ভলান্টিয়ারিং করতে গিয়ে নেটওয়ার্কিং করার একটা সুযোগ তৈরি হয়। ভলান্টিয়ারদের বিভিন্ন ধরনের বিভিন্ন পেশার বিভিন্ন বয়সের মানুষের সাথে ইন্টারঅ্যাকশনের সুযোগ থাকে। প্রায় সবাই-ই ভলান্টিয়ারদের বেশ গুরুত্ব দেয়। নিজের কাজটা ঠিকমত গুছিয়ে করতে পারলে যে কোন গুরুত্বপূর্ণ মানুষের চোখে পড়াটাও সহজ। তাই ভলান্টিয়ারিং তোমাকে কোন চাপ বা এক্সপেক্টেশন ছাড়াই নতুন মানুষজনের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দেবে।

শুধু তাই নয়, ভলান্টিয়ারিং করতে গিয়ে তুমি সমমনা মানুষদের সাথে একটা কমিনিউটি গড়ে তুলতে পারো। একসাথে ভলান্টিয়ারিং করার সময় খুব ভালো কিছু বন্ধুও খুঁজে পাবে।

৪. ক্যারিয়ার গোল ঠিক করতে সাহায্য করবে

ভলান্টিয়ারিং তোমার ক্যারিয়ার গোল সেট করতে সাহায্য করবে। তুমি কোন ধরনের ক্যারিয়ার গড়তে চাও, সেই ধরনের জবে তোমার কী ধরনের কাজ করতে হতে পারে- তা তুমি ভলান্টিয়ারিং করার মাধ্যমে শিখতে পারবে।

এমনকি তোমার মধ্যে কী কী স্কিল ডেভেলপ করতে হবে, কোন কোন প্রফেশনালিজমে ঘাটতি আছে, তোমার সেক্টরে যারা ক্যারিয়ার গড়েছে তারা কিভাবে শুরু করেছিলো, এখন তারা ক্যারিয়ারকে কোন জায়গায় নিয়ে এসেছে, কোন কাজটা করা উচিত, কোন কাজটা করা উচিত না, কী কী কোর্স করা উচিত, ট্রেনিং নেওয়া উচিত, তোমার ক্যারিয়ারকে কত দিন পরে কোথায় দেখতে চাও- ভলান্টিয়ারিং এই সমস্ত ব্যাপারে রিয়েল লাইফ এক্সপেরিয়েন্স পেতে সাহায্য করবে।

৫. নতুন স্কিল ডেভেলপ করবে

ভলান্টিয়ারিং নতুন নতুন স্কিল ডেভেলপ করতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, এই স্কিল তুমি প্রফেশনালি ডেভেলপ করতে পারবে। প্রফেশনাল মানুষজনের সাথে কাজ করার সময় তারা কিভাবে কাজ করছে, কিভাবে নিজের স্কিল ডেভেলপ করছে, কোন স্কিলগুলোকে প্রায়োরিটি দিচ্ছে, কোন ঘাটতি কিভাবে কাটিয়ে উঠছে, প্রফেশনাল ম্যানার-অ্যাটিকেট কিভাবে মেইনটেন করছে- সবকিছু নিজের চোখে দেখতে পারবে। সেই সাথে তা নিজের জীবনও কাজে লাগাতে পারবে।

কোন ধরনের ক্যারিয়ারে, কোন প্রতিষ্ঠানে তোমার পছন্দের কাজে যোগ দেওয়ার জন্য কী ধরনের স্কিল প্রয়োজন, তা তোমার মধ্যে না থাকলে সেটা তৈরি করার জন্য ছাত্রজীবনই উপযুক্ত সময়।

শুধু ক্যারিয়ার গড়তে বা চাকরি করতেই নয়- ভলান্টিয়ারিং ব্যক্তিগত জীবনেও বিভিন্ন ধরনের স্কিল ডেভেলপ করে। ভলান্টিয়ারিং করতে গিয়ে টাইম ম্যানেজমেন্ট শেখা যায়। অনেক ধরনের পরিস্থিতি হ্যান্ডেল করারও অভিজ্ঞতা হয়।

৬. আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে

অনেকেই জব রিকোয়েরমেন্ট দেখে চাকরিতে আবেদন করার সময় আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভোগে। কাজটা করতে পারব কি পারব না- ভলান্টিয়ারিং-এর এক্সপেরিয়েন্স থাকলে এই ধরনের ভয় কখনোই তোমার মধ্যে কাজ করবে না।

ভলান্টিয়ারিং-এর একটা অন্যতম সুবিধা হলো, বার্ডস আই ভিউ থেকে সমস্ত কিছু একবারে দেখা যায়। চাকরি করার সময় তুমি যে ডিপার্টমেন্টে কাজ করবে, তার বাইরে অন্য সবকিছু সম্পর্কে জানা বা বোঝাটা কঠিন। কিন্তু ভলান্টিয়ারিং করতে গেলে তুমি সব ডিপার্টমেন্ট সম্পর্কেই কিছু না কিছু ধারণা নিতে পারবে।

শুধু তাই নয়, ভলান্টিয়ারিং ব্যক্তিগত জীবনেও তোমাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে। ঠিক সময়ে কাজ শেষ করা, বিভিন্ন জায়গায় দৌড়াদৌড়ি করা, বিভিন্ন মানুষকে হ্যান্ডেল করা, ইভেন্ট পরিচালনা করতে করতে তোমার সামনে এক নতুন পৃথিবী খুলে যাবে। জীবনের যে কোন ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে সঠিক ডিসিশান নিতে সাহায্য করবে।

নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে শেখা, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা, নতুনভাবে পৃথিবীকে আবিষ্কার করতে শেখাটাও ভলান্টিয়ারিং-এর অবদান।

৭. প্যাশন ফুলফিল করবে

আমাদের অনেকেরই একাডেমিক লেখাপড়ার সাথে প্যাশনের তেমন মিল থাকেনা। কেউ হয়তো পশুপাখি পছন্দ করে কিন্তু লেখাপড়া করছে মার্কেটিং-এ, আবার কারো হয়তো সাহিত্যে খুব আগ্রহ, কিন্তু পড়তে হয়েছে গণিতে।

ভলান্টিয়ারিং তোমার প্যাশনকে ফুলফিল করবে। ভলান্টিয়ারিং করতে গিয়ে তুমি একাডেমিক লেখাপড়ার সাথে প্যাশনকে সমন্বয় করতে পারবে। যত ধরনের সোশাল ওয়ার্ক করতে চাও, যে সব ক্ষেত্রে পৃথিবীকে বদলাতে চাও- সবকিছুরই প্রথম পদক্ষেপ নিতে পারো ভলান্টিয়ারিং করতে গিয়ে।

কোন সেক্টরে ভলান্টিয়ারিং করতে চাও- তা বেছে নেওয়া একদমই তোমার হাতে। ছোটবেলার যদি কোন স্বপ্ন থাকে, যা সুযোগের অভাবে পূরণ করতে পারোনি- ভলান্টিয়ারিং তোমার সেই অভাব পূরণ করে দিবে।

৮. সোশাল ও রিলেশনশীপ স্কিল বাড়িয়ে তুলবে

ভলান্টিয়ারিং মানুষের মধ্যে সোশাল ও রিলেশনশিপ স্কিল বাড়িয়ে তোলে। ইন্ট্রোভার্টদের মধ্যে অনেকেই সামাজিক সম্পর্কগুলো মেইন্টেন করতে পারে না। অনেক মানুষের মধ্যে গিয়েও মানিয়ে নিতে পারে না। খুব বেশি মানুষের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলতে কষ্ট হয়। যা জীবনের সব ক্ষেত্রে অসুবিধার সৃষ্টি করে।

বেশিরভাগ চাকরি ক্ষেত্রে এখন কমিউনিকেশন স্কিলের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। আর যদি এমন হয় যে, চাকরি ক্ষেত্রে গিয়ে কাস্টমারকে হ্যান্ডেল করতে হচ্ছে তাহলে তো আর কথাই নেই। তাই চাইলেও এখন পার্সোনালিটির দোহাই দিয়ে সোশ্যাল ও রিলেশনশিপ স্কিলকে এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই।

ভলান্টিয়ারিং কমিউনিকেশন স্কিল বাড়ানোর সাথে সাথে সামাজিক সম্পর্কগুলো কিভাবে মেনে চলতে হয়, সব মানুষের সাথে কিভাবে সম্পর্ক গড়ে তুলতে হয় এবং সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হয় এই ব্যাপারগুলোর শিক্ষা দেয়।

তাই যাদের সোশ্যাল ও রিলেশনশিপ স্কিল ভালো না তারা ভলান্টিয়ারিং করার মাধ্যমেই এই স্কিলগুলো ডেভলপ করতে পারো। এই স্কিলগুলো ডেভলপ করার জন্য পরবর্তীতে সময় পাওয়া যাবে না। চাকরি ক্ষেত্রে গিয়ে কোন ছাড়ও পাওয়া যাবে না। তাই ছাত্রজীবনই এই স্কিলগুলো বাড়িয়ে নেওয়ার উপযুক্ত সময়।

৯. প্যাশন ও পজিটিভিটিই একমাত্র রিকোয়ারমেন্ট

লেখাপড়া হোক বা চাকরি- জীবনের সব ক্ষেত্রেই চান্স পাওয়ার জন্য অনেক ধরনের রিকোয়ারমেন্ট লাগে। কিন্তু ভলান্টিয়ারিং-এ প্যাশন ও পজিটিভিটিই একমাত্র রিকোয়ারমেন্ট।

তুমি যদি একজন পজেটিভ মানুষ হয়ে থাকো, তোমার ভলান্টিয়ারিং করার ক্ষেত্রটি যদি তোমার এরিয়া অফ ইন্টারেস্ট এবং প্যাশনের জায়গা হয়ে থাকে তাহলে এটিই ভলান্টিয়ার হিসেবে তোমার একমাত্র যোগ্যতা। ভলান্টিয়ারিং করতে চাইলে আর কোনো কিছুরই প্রয়োজন নেই। না কোন শিক্ষাগত যোগ্যতা না কোন এক্সপেরিয়েন্স!

১০. কমফোর্ট জোন ভাঙতে সাহায্য করবে

অনেকেই নিজের পছন্দের বাইরে কোন কাজ করতে চায় না। একসময় একটি কমফোর্ট জোন তৈরি করে তার মধ্যে থাকতে অভ্যস্ত হয়ে যায়।ফলে যখন নতুন ধরনের কোনো পরিস্থিতি আসে সেটাকে হ্যান্ডেল করতে পারে না। মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে।

ভলান্টিয়ারিং আমাদের কমফোর্ট জোন ভাঙতে সাহায্য করে। ভলান্টিয়ারিং করতে গিয়ে আমাদের অনেক ধরনের নতুন নতুন কাজ করতে হয়, যেটা আমরা আগে কখনো করিনি। অথচ বাস্তব জীবনে সাফল্যের জন্য এই কাজগুলো অনেক সময় করাটা আবশ্যক হতে পারে, তখন ভলান্টিয়ারিং এর পূর্ব অভিজ্ঞতাটা বেশ কাজে লাগবে ।

কমফোর্ট জোন ভেঙে কাজ করার অভ্যাস আমাদের পরবর্তী জীবনে খুব কাজে লাগে। কারণ সব সময় আমরা পছন্দসই কাজ বা পছন্দনীয় সিচুয়েশন পাই না। কমফোর্ট জোন ভাঙার জন্য যে সময় দরকার তাও আমরা পরবর্তী জীবনে পাব না।

ছাত্রজীবনই কমফোর্ট জোন ভেঙে কাজ করতে শেখার উপযুক্ত সময়। ভলান্টিয়ারিং এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে

১১. সচেতনতা বাড়ায়

ভলান্টিয়ারিং করতে গিয়ে আমাদেরকে অনেক সময় প্রচুর মানুষের মাঝে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ করতে হয়। যা অনেক সময় নিজের ব্যক্তিগত জীবনেও কাজে লাগে। শুধু তাই নয় এই সচেতনতা আমরা আমাদের পরিবারেও ছড়িয়ে দিতে পারি। তাই ভলান্টিয়ারিং শুধুমাত্র সামাজিক গোষ্ঠী নয়, ব্যক্তিগত সচেতনতা বাড়াতেও সাহায্য করে।